কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার; যে ৫ অভ্যাস বাদ দেবেন

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার; যে ৫ অভ্যাস বাদ দেবেন।

কিডনি সমস্যার ৫-১৫% নির্ভর করে বয়স, লিঙ্গ, পূর্বের কোনো অসুখ ইত্যাদির ওপর। কিডনিতে সমস্যা হলে তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকী মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের কারণে রোগী ও তার পরিবারকে বড় ধরনের মানসিক ও আর্থিক চাপে পড়তে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি একবার দেখা দিলে আর পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব হয় না।

পি.ডি. হিন্দুজা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট ডাঃ মহেশ প্রসাদ বলেন, বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা সরাসরি কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা কিডনিতে থাকা অসুখকে বাড়িয়ে তোলে। জীবনযাপনের ধরন এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একটু সতর্ক হলে এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব। সম্প্রতি প্রকাশিত CRIC এর এক গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চললে তা কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। জীবনযাপনের এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো আপনার কিডনিকে ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে-

স্থুলতা

আধুনিক জীবনযাপনের কারণে আমরা যতটুকু এনার্জি গ্রহণ করি তার বেশিরভাগই খরচ হয় না। সারাদিন বসে থেকে কাজ করা, অবসর পেলে কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা টিভি দেখে সময় কাটানো- এসব অভ্যাসের কারণে বাড়ে স্থুলতা। এটি কিডনির সমস্যার অন্যতম কারণ। সেইসঙ্গে এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন প্রতিরোধ ও হার্টের কার্যকারিতা হ্রাস করার জন্যও দায়ী। আবার এসব সমস্যা কিডনির রোগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

পুরুষের কোমর ৪০ ইঞ্চি ও নারীর কোমর ৩৫ ইঞ্চির বেশি হলে তাকে স্থুলতা হিসেবে ধরা হয়। খাবারের তালিকায় পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থুলতা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেইসঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে কিডনির রোগের প্রাথমিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া

বেশিরভাগ রেডি টু ইট এবং প্যাকেটজাত খাবারেই থাকে অতিরিক্ত লবণ। অতিরিক্ত লবণ খেলে তা বিভিন্নভাবে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেইসঙ্গে বাড়িয়ে দেয় উচ্চ রক্তচাপও। বয়স্ক এবং স্থুল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি লবণ খেলে তা অনেক ওষুধের কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে পারে।

অনেকগুলো গবেষণায় উঠে এসেছে যে, লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। যারা উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন না তাদের জন্যও লবণ কমিয়ে খাওয়ার অভ্যাস উপকারী।

ধূমপান

ধূমপানের অভ্যাস কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। ধূমপানের কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। যে কারণে বেড়ে যায় রক্তচাপ। এটি হার্ট ও রক্তনালীকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানের অভ্যাস শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী।

ডাঃ প্রসাদ বলেন, সিগারেটে টার, আর্সেনিক, ফর্মালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদির মতো ৪০০টিরও বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। নিকোটিন অত্যন্ত আসক্তিযুক্ত। এর কারণে শরীরের প্রায় সব অঙ্গ ও কার্যকারিতা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।

আরো পরুনঃ গার্মেন্টস পদে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির বেতন 2023

শারীরিক কার্যকলাপ না থাকা

বসে থাকার অভ্যাস কিডনি রোগের বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ। শারীরিক কার্যকলাপ না থাকার কারণে অনেক সময় শরীরে ওষুধ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে না থাকা, বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা, খেলাধুলা ইত্যাদি যেকোনো বয়সের জন্যই উপকারী। শারীরিক কার্যকলাপ না থাকলে কোনো ওষুধই কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

অ্যালকোহল

অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা কিডনিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে কিডনি রক্ত পরিষ্কার করার ক্ষমতা হারাতে থাকে। এটি ডিহাইড্রেশন ও ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বাড়িয়ে তোলে। অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা লিভারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেইসঙ্গে গ্যাস্ট্রিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা শরীরকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

You May Also Like

About the Author: Sazzamul Ahmed